মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
প্র : ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম সাল কত?
উ : ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দ।
প্র : তাঁর জন্মস্থান কোথায়?
উ : শিয়ালডাঙ্গা, কাঁচড়াপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ।
প্র : তিনি মূলত কী ছিলেন?
উ : কবি ও সাংবাদিক।
প্র : তিনি কী নামে সমধিক পরিচিত?
উ : ঈশ্বর গুপ্ত নামে।
প্র : তিনি নিজের সাধনায় কোন কোন বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করেন?
উ : ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষা এবং বেদান্ত, দর্শন ও তন্ত্রশাস্ত্রে।
প্র : তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাত ছিলেন?
উ : সংবাদ প্রভাকর (১৮৩১ খ্রি. সাপ্তাহিক; ১৮৩৯ খ্রি. দৈনিক)।
প্র : বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম দৈনিক পত্রিকা কোনটি?
উ : দৈনিক সংবাদ প্রভাকর (১৮৩৯)।
প্র : সংবাদ প্রভাকরের পরিচয় দাও।
উ : ‘সংবাদ প্রভাকর’ (১৮৩১) একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু ১৮৩৬ সালে পুনর্বার ছাপা হয়। ১৮৩৯ সালে বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিকরূপে আত্মপ্রকাশ করে। সেকালের বহু খ্যাতনামা ব্যক্তি, যেমন জয়গোপাল তর্কালঙ্কার, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখ এখানে লিখতেন। বঙ্কিমচন্দ্র ও দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা এই পত্রিকা দিয়েই শুরু হয়। ঈশ্বর গুপ্ত এই পত্রিকাতেই প্রাচীন কবিদের অপ্রকাশিত রচনা ও জীবনচরিত প্রকাশ করেন। ১৮৫৯-তে ঈশ্বর গুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই রামচন্দ্র গুপ্ত এ পত্রিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
প্র : ‘সংবাদ প্রভাকরে’র যে-কোনো চারজন বিশিষ্ট লেখকের নাম লেখ?
উ : ‘সংবাদ প্রভাকরে’র সম্পাদক ছিলেন কবি ঈশ্বর গুপ্ত। তিনি ছাড়া আর তিনজন বিশিষ্ট লেখক হলেন- রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং দীনবন্ধু মিত্র।
প্র : বাংলা সাহিত্যে তিনি কী হিসেবে পরিচিত?
উ : যুগসন্ধির কবি।
প্র : বাংলা সাহিত্যে যুগসন্ধিকাল কোন সময়কে ধরা হয়?
উ : ১৭৬০ থেকে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ।
প্র : ঈশ্বর গুপ্তকে যুগসন্ধির কবি বলা হয় কেন?
উ : ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ সূচিত হলেও বাংলা কাব্যসাহিত্যে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে আধুনিকতা আরম্ভ হয় নি। এই ষাট বছর (১৮০১-১৮৬১) কাব্যে আধুনিকতায় পৌঁছার চেষ্টা চলেছে মাত্র। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবৎকাল ১৮১২ থেকে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দ। তিনি বড় হয়েছেন কলকাতার নাগরিক পরিবেশে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতাচর্চায় তিনি এ সময় মধ্যযুগের দেবদেবীর কথা বা কাহিনি নির্ভর কাব্যরচনা বর্জন করে ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় ছোট ছোট কবিতা লেখা শুরু করেন। তপ্সে মাছের মতো সামান্য প্রাণীও তাঁর কাব্যের বিষয়বস্তু হয়। তাঁর কবিতায় সমাজসচেতনতা বিশেষ করে মাতৃভূমির প্রতি দরদ অর্থাৎ দেশাত্মবোধ স্পষ্ট দেখা যায়। আবার কবিওয়ালাদের কাব্য ঢঙ্, পয়ার ও ত্রিপদীর ব্যবহারও তাঁর কবিতায় ব্যাপকভাবে লক্ষযোগ্য। আসলে মধ্যযুগের শেষ প্রতিনিধি ভারতচন্দ্র এবং আধুনিক যুগের প্রথম পুরুষ মাইকেল মধুসূদন- এই দুই মনীষীর মধ্যবর্তীকালে ঈশ্বর গুপ্তের আবির্ভাব। তাঁর মধ্যে মধ্যযুগের কাব্য-বৈশিষ্ট্য ও আধুনিক যুগের সূচনা-বৈশিষ্ট্য সমানভাবে লক্ষ করা যায় বলে তাঁকে যুগসন্ধির কবি বলা হয়।
প্র : তাঁর রচনা রীতির বিশেষত্ব কী?
উ : ব্যঙ্গ বিদ্রুপ এবং দেশ ও সমাজভাবনা।
প্র : তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর নাম কী?
উ : রামপ্রসাদ সেন কৃত কালীকীর্তন (১৮৩৩), কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তাঁর জীবনবৃত্তান্ত (১৮৫৫), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংগ্রহ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত সংগ্রহ (১৩০৬), মণিকৃষ্ণ গুপ্ত সম্পাদিত সংগ্রহ (১৩০৮) বঙ্গাব্দ)।
প্র : তাঁর সম্পাদনায় আর কোন পত্রিকা প্রকাশিত হয়?
উ : সংবাদ রত্নাবলী (১৮৩২), সংবাদ সাধুরঞ্জন (১৮৪৭)।
প্র : তাঁর মৃত্যু তারিখ কত?
উ : ২৩.০১.১৮৫৯।