শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
ক-অক্ষর গোমাংস (বর্ণ পরিচয়হীন মূর্খ): আরে বলছ কী, ব্যারিস্টার সাহেবের ছেলে হয়ে কি না ক অক্ষর গো-মাংস।
কংস মামা (নির্দয় আত্মীয়) : অকালে স্বামী মারা গেলেন, এখন কি বিধবাকে কংস মামার দল সাহায্য করবে ভেবেছো?
কংস মামা (নির্মম আত্মীয়): কংস মামার হাত থেকে উদ্ধার না পেলে আর বাঁচা নেই, জীবন যায় যায়।
ক-অক্ষর গোমাংস (বর্ণ পরিচয়হীন) : মহিমকে দেখে মনে হতে পারে শিক্ষিত, কিছু আসলে সে ক-অক্ষর গোমাংস কিছুই জানে না।
কই মাছের প্রাণ (যা সহজে মরে না): কই মাছের প্রাণ বই তো নয়, নইলে এক মাস উপবাস করে বেঁচে থাকে?
কই মাছের প্রাণ (শক্তপ্রাণ) : লোকটা ১১০ বছরে মারা গেলেন, কই মাছের প্রাণ নিয়ে জন্মেছিলেন বটে।
কাক জ্যোৎস্না (ক্ষীণ চন্দ্রালোক) : শামীম ফজরের নামাজ পড়তে কাক জ্যোৎস্নায় ঘুম থেকে ওঠে।
কাকতালীয় (আকস্মিক যোগাযোগ) : নতুন প্রধান শিক্ষক এলেন আর পরীক্ষার ফল ভালো হলো এযে কাকতালীয় ব্যাপার।
কাকভূখন্ডী (দীর্ঘজীবী ব্যক্তি): কবি কায়কোবাদ প্রায় একশ বছর বেঁচে কাকভূখন্ডী হতে চেয়েছিলেন।
কাকস্নান (সংক্ষিপ্ত গোসল) : শীতকালে অনেকেই কাকস্নান করে।
কাগজে কলমে (লিখিতভাবে) : নারীর অধিকার কাগজে কলমে থাকলে তা বাস্তবায়ন হবেই।
কাঁচা পয়সা (নগদ টাকা) : কামরুল তার জমির ফসল বিক্রি করে প্রচুর কাঁচা পয়সা উপার্জন করেছে।
কাঁচা পয়সা (নগদ প্রচুর উপার্জন): ভাল ডাক্তার হতে পারলে কাঁচা পয়সার অভাব নেই।
কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা (অল্প বয়সে বিগড়ানো): শিশুকাল থেকে ছেলেদের দিকে নজর না রাখলে কাঁচা বাঁশের ঘুণ ধরবে।
কাঁচা বাঁশে ঘুন (অল্প বয়সে নষ্ট) : বাবামার কথা না শুনে জনির কাঁচা বাঁশে ঘুন ধরল।
কাঁচা হাত (অপক্ব): লোকটির লেখা ভাল নয়; দেকেই মনে হয় কাঁচা হাতের লেখা।
কাছা আলগা (অসাবধান) : রেজা একটা কাছা আলগা লোক, তার কাছে কিছু আশা করা বোকামি।
কাজ গুছানো (সমাপ্তি) : তিন্নি বই মেলায় যাবে বলে তাড়াতাড়ি কাজ গুছিয়ে নিল।
কাজির বিচার (গোঁজামিল দিয়ে বিচার): আরে ভায়া বিবাদ তো মিটেই গেল, এ যে কাজির বিচার।
কাজির বিচার (ন্যায়বিচার) : হাবিবুরের বিচার একেবারে কাজির বিচার কোনো পক্ষপাতিত্ব পাবে না।
কাজের কাজি (কর্মদক্ষ) : মিঠু শুধু লেখাপড়ায় নয়, অন্য সব কাজেও ভালো, আসলে সে সকল কাজের কাজি।
কাজের কথা (প্রয়োজনীয়) : মুকুল এলোমেলো কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা বল।
কাঞ্চন মূল্য (অতি উচ্চ মূল্য) : স্বর্ণ এখন কাঞ্চন মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়া (ব্যথার উপরে ব্যথা দেওয়া): যথাসর্বস্ব খুইয়ে সে শোকাতুর; তার উপর র্ভৎসনা করে তার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিও না।
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা (কষ্টের উপর কষ্ট) : একদিকে বউয়ের জ্বালা অন্যদিকে অফিসে বসের ঝাড়ি- এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা (শত্রু দিয়ে শত্রু নাশ) : কিভাবে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়, শোষকরা তা ভালো করেই জানে।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা (শত্রু দ্বারা শত্রু নাশ): আসাদ আমার বিরুদ্ধে গিয়ে কি বলবে, তার অন্তরঙ্গ বন্ধুকে আমি তার বিরুদ্ধে লাগিয়েছি, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে জানি।
কাঁটায় কাঁটায় (ঠিক সময়) : চাকরির পরীক্ষা কাঁটায় কাঁটায় শুরু হয়।
কাঠখোট্টা (নীরস ও অনমনীয়) : রফিক সাহেব বড় কাঠখোট্টা লোক, তাকে দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় না।
কাঠখড় (আয়োজন) : ছেলেকে বিসিএস ক্যাডার বানাতে মাসুদ সাহেবের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অসম্ভব বস্তু) : লেখাপড়া না করে “এ প্লাস” পাওয়া এ যে, কাঁঠালের আমসত্ত্ব।
কাঁঠালের আমস্বত্ব (অসম্ভব বস্তু): তোমার সেদিনকার আষাঢ়ে গল্পটা কাঁঠালের আমস্বত্বের মতই আমাদের উপভোগ্য হয়েছিল।
কাঠের পুতুল (জড়বৎ নিষ্ক্রিয়): নূরজাহান স্বামীর দিকে অনুরোধের সুরে বলল, “তুমি একটু গা করো, অমন কাঠের পুতুল হয়ে বসে থেকো না।”
কাঠের পুতুল (নির্বাক) : কাঠের পুতুলের মত বসে আছ কেন, কাজে লেগে যাও।
কান খাড়া করা (সতর্ক হওয়া): ঝোপের ধারে বাঘের গর্জন শুনে শিকারী কান খাড়া করল।
কান পাতলা (যে সব বিশ্বাস করে) : রহমত কান পাতলা মানুষ তাকে সব কথা বলতে নেই।
কান ভারী করা (কুপরামর্শ দান) : অফিসের বসের কান ভারী করা ঠিক না।
কান ভারী করা (কুপরামর্শ দান): মাতৃহীন কন্যার বিরুদ্ধে বিমাতা স্বামীর কান ভারী করল।
কানকাটা (নির্লজ্জ) : হারিছকে কেউ পছন্দ করে না, কারণ সে একটা কানকাটা লোক।
কানা কড়ি (মূল্যহীন) : ভাঙা কলসির দাম এক কানা কড়িও নয়।
কানা মেঘ (যাতে বৃষ্টি হয় না) : কানা মেঘ মানুষের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
কানাকড়ি (কপর্দক): লোকটির পকেটে হাত দিয়ে দেখিস যে, তার কানাকড়িও নেই।
কানামাছি খেলা (শিশুদের খেলা) : সারাদিন কানামাছি খেলে সময় নষ্ট করলে পরীক্ষায় সরষে ফুল দেখবে।
কানে আঙুল দেয়া (না শোনার চেষ্টা) : পাওনা টাকা চাইতে গেলেই সে কানে আঙুল দিয়ে থাকে।
কানে খাটো (যে কম শুনতে পায়): তুমি জানো না ও যে কানে খাটো, চেঁচিয়ে না বললে শুনবে না।
কানে তালা লাগা (বধিরতা ভাব) : বোমার শব্দে সখিনার কানে তালা লাগল।
কানপাতলা (যে সব কথাই বিশ্বাস করে): তুমি এত কানপাতলা লোক যে অপরের কথা শুনেই বিনা কারণে উত্তেজিত হয়ে উঠ।
কালে ভদ্রে (কদাচিৎ): কালে-ভদ্রে দেখা সাক্ষাৎ হলে আন্তরিকতা জন্মাতে পারে ন্ত না।
কাষ্ঠহাসি (কপট হাসি): কাষ্ঠহাসি দ্বারা পরাজিত গুপ্তশত্রু বন্ধুত্বের ভান করল।
কচু পোড়া (অখাদ্য) : মমিনের ছেলেরা কচু পোড়া খেয়ে মানুষ হলো।
কচু বনে কালাচাঁদ (অপদার্থ): পড়াশুনার নাম নেই, পোশাকের কি ঘটা। এমন কচু বনের কালাচাঁদ আর দেখিনি।
কচুকাটা করা (নির্মমভাবে ধ্বংস করা) : বাড়িতে না বলে বের হয়েছি, এখন আমাকে পেলে বাবা কচুকাটা করবে।
কচ্ছপের কামড় (যা সহজে ছাড়ে না) : মাদকের নেশা কচ্ছপের কামড়ের মত, তাই সাবধান হওয়া উচিত।
কেউ কেটা (তুচ্ছ যেমন তেমন-এখানে ‘সর্বেসর্বা’ অর্থে ব্যবহৃত): স্থানীয় এম. পি. সাহেব একজন কেউকেটো লোক তাকে ধরলে স্কুলের কাজটা হতে পারে।
কেউকেটা (গণ্যমান্য) : সাহিত্যের জগতে হুমায়ুন আজাদ একজন কেউকেটা লোক।
কেঁচো খুঁড়তে সাপ (তুচ্ছ বিষয় হতে গুরুতর বিষয়ের উদ্ভব): মকবুলের চুরির সামান্য ব্যাপারটার সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ বিমল তালুকদারের সক্রিয়তা বুঝতে পারল-এ যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হল।
কেঁচো খুড়তে সাপ (বিপদজনক পরিণতি) : চুরির সাক্ষ্য দিতে এসে উকিলের জেরায় নিজেই চোর সাব্যস্ত হলো এ যেন, কেঁচো খুড়তে সাপ বের হওয়ার মতো।
কেঁচো গন্ডুষ (পুনরায় শুরু): কবিতার সরলার্থটি কেঁচো গন্ডুষ করে লেখ।
কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা (তুচ্ছ বস্তুর সাহায্যে অসম্ভব বিষয়কে করায়ত্ত করা): আরে! মুন্সির ছেলেটা বিয়ে করেছে জজের মেয়ে, এ দেখছি কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরলে।
কেতা দুরস্ত (পরিপাটি) : হাফিজের চালচলন বেশ কেতা দুরস্ত।
কেতাদুরস্ত (পরিপাট): ওহে বাবু শুধু কেতাদুরস্ত হলেই চলবে না, কিছু বিদ্যাও থাকতে হবে।
কেবলা হাকিম (অনভিজ্ঞ): ওর মত কেবলা হাকিম দিয়ে কোন কাজ হবে না অন্য চেষ্টা করুন।
কোণঠাসা করা (জব্দ করা): ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মীমাংসার পূর্বে তাকে কোণঠাসা করে কোন লাভ হবে না।
কোমর বাঁধা (দৃঢ় সংকল্প) : রনিতা এবার কোমর বেঁধে নেমেছে, পাস করবেই।
কত ধানে কত চার (অভিজ্ঞতা অর্জন): বাপের টাকায় হোটেলে থেকে নবাবি করছ যখন নিজে রোজগার করে সংসার চালাতে হবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।
কত ধানে কত চাল (প্রকৃত অবস্থা) : সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিলে বুঝবে কত ধানে কত চাল।
কথা বেচে খাওয়া (কথায় ভোলানো) : জয় কথা বেচে খেতে বেশ পটু।
কথার কথা (প্রসঙ্গত যা বলা যায়): আমি যা বললাম তা কেবল কথার কথা, আসলে কি ঘটে, বলা যায় না।
কথার কথা (বাজে কথা) : তুমি এখনো তার সম্বন্ধে ভাবছ? সে যা বলেছে তা কথার কথা।
কথায় কথায় (প্রসঙ্গক্রমে) : কথায় কথায় মিথ্যা বলা ঠিক না।
কথায় চিড়ে ভিজে না (ফাঁকা আওয়াজে কাজ হয় না): লোকের উপকার করতে গেলে শুধু কথায় চিড়ে ভিজে না কাজ দেখানো চাই।
কুনো ব্যাঙ (সীমিত জ্ঞান): কুসংস্কারের বশীভূত হলে মানুষ মাত্রেই কুনো ব্যাঙ হয়ে পড়ে, স্বাধীন চিন্তাশক্তি লোপ পায়।
কপাল কাটা (অদৃষ্ট মন্দ হওয়া): বিধবার একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে তার কপাল কেটেছে।
কপাল ফেরা (অবস্থার উন্নতি): কন্ট্রাক্টরদের যুগ রে ভাই। তারা অল্প দিনের মধ্যেই কপাল ফেরাতে জানে।
কপাল ফেরা (ভালো অবস্থায় আসা) : লটারিতে ৩০ লক্ষ টাকা পেয়ে আমজাদের কপাল ফিরল।
কপালের লিখন (অলঙ্ঘনীয়) : হাবুর মা ক্যান্সারে মারা গেল। তাইতো লোকে বলে কপালের লিখন না যায় খণ্ডন।
কুপোকাত (পরাজিত): মোহাম্মদ আলীর কাছে লিস্টন মুষ্টিযুদ্ধে একেবারে কুপোকাত হয়ে গেল।
কূপমণ্ডূক (সীমাবদ্ধ জ্ঞান) : বর্তমান যুগে কূপমণ্ডূক হয়ে ঘরে বসে থাকলে ভাত জুটবে না।
কূপমন্ডুক (সীমাবদ্ধ জ্ঞান): মহিলা কয়টি অতি শান্তশিষ্ট ও মিতভাষিণী, যদিও কূপমন্ডুক।
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম (প্রভুর নির্দেশে কাজ) : কর্তার ইচ্ছায় কর্ম না করলে চাকরি থাকবে না।
কুল কাঠের আগুন (অসহ্য মানসিক কষ্ট) : মা মারা যাওয়ায় শামীমের মনে এখন কুল কাঠের আগুন জ্বলছে।
কুল কাঠের আগুন (তীব্র জ্বালা): পুত্রশোকাতুর পিতা একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে অন্তরে কুল কাঠের আগুন অনুভব করছে।
কল্কে পাওয়া (পাত্তা পাওয়া): কেমন ভাই নতুন জামাই, বিয়ে করতে যাবার সময় আমাদের নিয়ে যাবে, এখন দেখছি, তোমার কল্কে পাওয়াই ভার হল।
কলির সন্ধা (কষ্টের সূচনা) : একমাত্র রোজগারী পুত্রকে হারিয়ে বৃদ্ধার কলির সন্ধ্যার সূচনা হলো।
কলির সন্ধ্যা (দুঃখের আরম্ভ): দৈনন্দিন জীবনের উপযোগী জিনিসপত্রের দাম ক্রমেই বাড়ছে কিন্তু বেতন তেমন বাড়ছে না, এত কলির সন্ধ্যা।
কলমের খোঁচা (অনিষ্টের উদ্দেশ্যে লিখিত আদেশ) : তোমার মত লোকের চাকরি খেতে একটা কলমের খোঁচাই যথেষ্ট।
কলুর বলদ (নির্বিকারে পরিশ্রম করা): সে না বুঝে-সুজে কেবল কলুর বলদের মত খেটে মরে।
কলুর বলদ (পরাধীন) : অফিসের কেরানি শুধু কলুর বলদের মত খেটেই মরে।
কড়ায় গণ্ডায় (পুরোপুরি) : সুদখোর আনিসের সব পাওনা আমি কড়ায় গণ্ডায় শোধ করেছি।
কড়ায় গন্ডায় (পুরাপুরি): আপনার পাওনা আমি কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দেব; চিন্তা করবেন না।
কড়ি কপালে (ভাগ্যবান) : বিথি সরকারি চাকরি পেল, সত্যিই কড়ি কপালে লোক বলতে হবে।
কুঁড়ের বাদশা (খুব অলস) : কুঁড়ের বাদশাহদের কপালে দুঃখ লেগে থাকে।
কুড়ের বাদশা (ভয়ানক কুড়ে): তুমি দেখছি একটা কুড়ের বাদশা, খেয়ে-দেয়ে গল্প ফাঁদলে সংসার চলবে কি করে?
তথ্যসূত্র: পুরাতন বইয়ের দোকান/লাইব্রেরি হতে বিভিন্ন লেখকের বাংলা ব্যাকরণ বই সংগ্রহ করে তা এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।