বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
প্র : দীনবন্ধু মিত্রের জন্ম সাল কত?
উ : ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে।
প্র : তিনি কোথায় জন্ম গ্রহণ করেন?
উ : চৌবেড়িয়া গ্রাম, নদীয়া।
প্র : তাঁর সাহিত্যজীবনের শুরু কী দিয়ে?
উ : কবিতা দিয়ে।
প্র : তিনি কার অনুপ্রেরণায় কবিতা লিখেন?
উ : ঈশ্বর গুপ্তের।
প্র : তাঁর কবিতা কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশ পায়?
উ : সংবাদ প্রভাকর (১৯৩১), স?ংবাদ সাধু-রঞ্জন (১৮৪৭)।
প্র : তাঁর রচিত জনপ্রিয় কাব্যগুলো কী?
উ : সুরধুনী কাব্য (১ম ভাগ ১৮৭১ ও ২য় ভাগ ১৮৭৬) ও দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২)।
প্র : দীনবন্ধু মিত্র কোন রূপে সমাধিক খ্যাত?
উ : নাট্যকার রূপে।
প্র : নীলকর সাহেবদের বীভৎস অত্যাচারে লাঞ্ছিত নীল চাষীদের দুরবস্থা অবলম্বনে রচিত তাঁর নাটকের নাম কী?
উ : নীল-দর্পণ (১৮৬০)।
প্র : নীল-দর্পণকে বাংলাদেশের নাটক বলা হয় কেন?
উ : কারণ, নাটকটির কাহিনি মেহেরপুর অঞ্চলের, দীনবন্ধু ঢাকায় অবস্থানকালে তা রচনা করেন। নাটকটি প্রথম প্রকাশ হয় ঢাকার বাংলা প্রেস থেকে এবং প্রথম মঞ্চস্থও হয় ঢাকাতে।
প্র : নীল-দর্পণ নাটকের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কৃত ইংরেজিতে অনুবাদের নাম কী?
উ : Nil Darpan or The Indigo Planting Mirror (1861)
প্র : মধুসূদন কোন ছদ্মনামে এই অনুবাদ করেন?
উ : A Native.
প্র : তিনি আর কী রচনা করে দক্ষতার পরিচয় দেন?
উ : প্রহসন।
প্র : ইংরেজি শিক্সিত নব্য যুবকদের মদ্যপান ও বারবণিতা সঙ্গকে ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত প্রহসন কী?
উ : সধবার একাদশী (১৮৬৬)।
প্র : সমাজের প্রাচীনপন্থাদের ব্যঙ্গ করে তাঁর রচিত তপ্রহসনের নাম কী?
উ : বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬)।
প্র : তাঁর রচিত অপরাপর নাটকগুলোর নাম কী?
উ : নবীন তপস্বিনী (১৮৬৬), লীলাবতী (১৮৬৭), জামাই বারিক (১৮৭২), কমলে কামিনী (১৮৭৩) ইত্যাদি।
প্র : ‘নীল-দর্পণ’ নাটক সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘নীল-দর্পণ’ (১৮৬০) নাটকটির ঘটনা, বিষয়চিন্তা, রচনাস্থান, প্রকাশস্থান, মুদ্রণালয়, প্রথম মঞ্চায়ন সবই বাংলাদেশে। প্রথম প্রকাশের সময় দীনবন্ধুর নাম ছিল না। ‘নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ পথিকেনাভি প্রণীতম’ এইভাবে গ্রন্থাকারের নাম গুপ্ত রাখা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নীলকরদের অত্যাচারে পীড়িত সাধারণ কৃষক-জীবনের মর্মন্তুদ ছবি নাটকটিতে প্রকাশিত হয়। প্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করেন মধুসূদন দত্ত এবং তা প্রকাশ করেন রেভারেন্ড জেমস্ লঙ। নাটকের বাস্তবতা এবং চরিত্রগুলির স্বাভাবিকতার গুণের জন্য অনেকেই নীল-দর্পণকে Uncle Tom’s Cabin-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : গোলক বসু, নবীন মাধব, রাইচরণ, তোরাপ, সাবিত্রী, সরলতা, ক্ষেত্রমণি ইত্যাদি।
প্র : ‘সধবার একাদশী’ সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘সধবার একাদশী’ (১৮৬৬) প্রহসন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে সুরাপান ও বেশ্যাসক্তি একশ্রেণির যুবকের জীবনে, বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। ‘সধবার একাদশী’ সেই সামাজিক বিপর্যয়ের কাহিনি। নায়ক নিমচাঁদের জীবনে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ব্যর্থতা, অধঃপতন বোধ ও আত্মগ্লানি নাটকটিতে এক গভীর মাত্রা যোজনা করেছে। চরিত্রসৃষ্টি, সংলাপ, ঘটনাপ্রবাহ, কৌতুক সবকিছুর মিলিতরূপে ‘সধবার একাদশী’ বাংলা সাহিত্যের একটি স্মরণীয় রচনা। এই নাটকের নায়ক নিমে দত্ত বাংলঅ সাহিত্যের অবস্মিরণীয় চরিত্র। বলা হয়, কেনারাম চরিত্রের মধ্য দিয়ে তৎকালনি শিক্ষিত শ্রেণির নৈতিক অবস্থান এবং বিচার ব্যবস্থার হাস্যকর পরিচয় ফুটে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : জীবনচন্দ্র, অটলবিহারী, নিমচাঁদ, কেনারাম, সৌদামিনী, গিন্নী, কাঞ্চন ইত্যাদি।
প্র : নীর-দর্পণ কে কি ঐতিহাসিক নাটক বলা যায়?
উ : নীল-দর্পণ নাটকের কাহিনিসূত্র বাস্তব ঘটনাকেন্দ্রিক। বৃহত্তর নদীয়া জেলার চৌগাছা গ্রামের বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও গোড়াগাছা গ্রামের দিগম্বর বিশ্বাসের নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের কাহিনি এই নাটকের প্রেরণাভূমি। এদিক থেকে নাটকটি ঐতিহাসিক। কিন্তু নাটকের ঘটনা যেহেতু একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্দ তাই একে ঠিক ঐতিহাসিক নাটক বলা চলে না।
প্র : নীল-দর্পণ নাটকের কী কী ক্রটি সমালোচকেরা নির্দেশ করে থাকেন?
উ : নীল-দর্পণ নাটকের প্রধান ক্রটি অতি নাটকীয়তা। শেষ দৃশ্যে মৃত্যুর ঘনঘটা স্প্যানিশ ট্রাজেডির মতো বীভৎস রস সঞ্চার করে। দ্বিতীয় ক্রটি ভদ্রশ্রেণির চরিত্রগুলির সংলাপের কৃত্রিমতা, তৎসম শব্দবহুল সাধুরীতির ভাষা নিতান্ত কৃত্রিম হয়ে পড়েছে।
প্র : নীল-দর্পণ নাটককে ট্রাজেডি বলা যায় কি?
উ : নীল-দর্পণ নাটক সেই অর্থে ট্রাজেডি নয়। কারন এই নাটকে কোনো নায়ক চরিত্র ভুল-ভ্রান্তি হেতু দুঃখবহ পরিণতির জন্য দায়ী নয়। দর্শকচিত্তে ট্রাজেডিসুলভ Pity-জাগায় না নাট্যকার ট্রাজিক করুণরস সৃষ্টি করতে মৃত্যুর ঘটনার বাহুল্য সৃষ্টি করে ভয়ানক রস সৃষ্টি করেছেন। একে বরং মেলোড্রামা বলা যায়।
প্র : ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’র পরিচয় দাও।
উ : ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ (১৮৮৬) হাস্যরসাত্মক নাটক। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিরেন যে এই নাটক কোনো ‘জীবিত ব্যক্তিকে লক্ষ্য করিয়া লিখিত হইয়াছিল।’ ১৮৭২ সালে নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়্ উল্লেখযোগ্য চরিত্র : নসিরাম, রতা, রাজীব, রাজমণি, কেশব, বৈকুণ্ঠ ইত্যাদি।
প্র : ‘জামাইবারিক’ নাটক সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘জামাইবারিক’ (১৮৭২) হাস্যরসাত্মক নাটক। ১৮৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, ‘জামাই বারিকের দুই স্ত্রীর বৃত্তান্ত প্রকৃত।’ নাটকটির ঘটনা সংস্থান, চরিত্রসৃষ্টি এবং সংলাপ রচনা বহু প্রশংসিত। এই নাটকের অন্তর্গত বিন্দুবাসিনী ও বগলার কলহ দৃশ্যটি ১৯২৬ সালে ‘জেনানাযুদ্ধ’ নামে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : বিজাবল্লভ, অভয়কুমার, কামিনী, বগলা, বিন্দুবাসিনী ইত্যাদি।
প্র : ‘কমলেকামিনী’ নাটক সম্পর্কে লেখ।
উ : ‘কমলেকামিনী’ (১৮৭৩) দীনবন্ধু মিত্রের সর্বশেষ নাটক। এই নাটকের পটভূমি কাছাড় অঞ্চল। চরিত্রগুলি সবই অভিজাত বংশীয় তবে দুবৃল। ২০শে ডিসেম্বর ১৯৭৩ তারিখে নাটকটি ন্যাশনাল থিয়েটারে সর্বপ্রথম অভিনীত হয়। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : রাজা, সমরকেতু, শশাঙ্কশেখর, গান্ধারী, সুশীলা, সুরবালা।
প্র : দীনবন্ধু মিত্র কত তারিখে মৃত্যুবরণ করেন?
উ : ১লা নভেম্বর, ১৮৭৩।