শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য

প্র : কোন কোন আমলে মধ্যযুগের সাহিত্য রচিত হয় ?
উ : পাঠান ও সুলতানি আমলে।
প্র : বখতিয়ার খিলজির রাজধানী কোতায় ছিল ?
উ : উত্তরবঙ্গের দেবকোট।
প্র : ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-র মতে অন্ধকার যুগের সীমা উল্লেখ কর ?
উ : তাঁর মতে অন্ধকার যুগ ১২০১ থেকে ১৩৫২ খ্রী : পর্যন্ত।

প্র : বাংলার কোন রাজার সময় শ্রীচৈতন্যেদেবের জন্ম হয় ?
উ : সুলতান হুসাইন শাহের আমলে।
প্র : শ্রীচৈতন্যের সময়কাল উল্লেখ কর ? তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?
উ : জন্ম : ১৪৮৬ সালে মৃত্যু : ১৫৩৩ সালে। তিনি নবদ্বীপে জন্ম গ্রহণ করেন এবং পুরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
প্র : শ্রীচৈতন্যের পূর্ব পুরুষ কোথায় বাস করতেন ?
উ : সিলেট জেলায়। তাঁর বাবার নাম ছিল জগন্নাথ মিশ্র।
প্র : শ্রীচৈতন্যের কী কী নাম ছিল ?
উ : চৈতন্যের বাল্য নাম ছিল নিমাই। তাঁর গায়ের রঙ উজ্জ্বল ছিল বলে তাকে গোরা বা গোরাঙ্গ বলা হতো। তার প্রকৃত নাম ছিল বিশ্বম্ভর। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তার নাম হয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বা সংক্ষেপে চৈতন্য।
প্র : মধ্যযুগ কোন ধর্মের শাসনামলের ?
উ : মুসলিম শাসনামলে। তুর্কি বীর বখতিয়ার খিলজি থেকে (১২০৪) পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দোলার পরাজিত হওয়া ( ১৭৫৭) পর্যন্ত।
প্র : মধ্যযুগকে কিভাবে বিন্যস্ত করা হয় ?
উ : তুর্কি যুগ (১২০০-১৩৫০), সুলতানি যুগ( ১৩৫১-১৫৭৫) ও ও মোঘল যুগ (১৫৭৬ -১৭৫৭)।
প্র : শ্রীচৈতন্যকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগকে কিভাব ভাগ করা হয় ?
উ : প্রাকচৈতন্য যুগ (১৩৫১-১৫০০), চৈতন্যযুগ (১৫০১-১৬০০) ও চৈতন্য পরবর্তী যুগ (১৬০১-১৮০০)।
প্র : সুলতানি রচিত আমলে রচিত সাহিত্যের পরিচয় দাও ?
সুলতান কবি কাব্য
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ শাহ মুহম্মদ সগীর ইফসুফ জোলেখা
জালালুদ্দিন মুহম্মদ শাহ কৃত্তিবাস রামায়ন (অনুবাদ)
রুকনউদ্দিন বারবক শাহ যশোরাজ খান শ্রীকৃষ্ণবিজয়
শামসুদ্দিন ইফসুফ শাহ জৈনুদ্দিন রসুলবিজয়
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ বিপ্রদাস
বিজয়গুপ্ত
মালাধর বসু মনসামঙ্গল
মনসামঙ্গল
শ্রীকৃষ্ণবিজয
নাসিরুদ্দিন নসরত শাহ বিদ্যাপতি
কবীন্দ্র পরমেশ্বর বৈষ্ণবপদ
মহাভারত
প্র : মধ্য যুগের প্রথম সাহিত্য নিদর্শন কি ?
উ : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।
প্র : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কবে কখন কোথা থেকে আবিষ্কৃত হয় ?
উ : বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ ১৯০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের এক গৃহস্থ বাড়ির গোয়ালঘর থেকে এ কাব্যের পুথিটি খুঁজে পান।
প্র : প্রাপ্তিকালে এ পুথির নামকরণ কি ছিল ?
উ :এর নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ।
প্র : মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যের প্রধান ধারাগুলি কী কী ?
উ : বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য,শাক্তপদ, অনুবাদ সাহিত্য , নাথ সাহিত্য, জীবনীসাহিত্য, পুথিসাহিত্য, মৈমনসিংহ গীতিকা, আরকান রাজসভায় রচিত বাংলা সাহিত্য, মর্সিয়া সাহিত্য, চরিত সাহিত্য, লোকসাহিত্য ইত্যাদি।
প্র : মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপাদান কি ?
উ : বৈষ্ণব পদাবলী। বৈষ্ণব ধর্মের গূঢ় বিষয নিয়ে বৈষ্ণব পদাবলী রচিত। রাধাকৃষ্ণের প্রেমই এ কাব্যের মূল বিষয়। বৈষ্ণব পদকর্তাদর ‘মহাজন’ বলা হয়।
প্র : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য প্রথম কবে সম্পদনা করা হয় ?
উ : সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য পঞ্চদশ শতকে রচিত। রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, এ পুথি চর্তুদশ শতাব্দীর লেখা। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বরেছেন, গ্রন্থটির লিপিকাল আনুমানিক১৪০০ খ্রিস্টাব্দ। বড়ু চন্ডিদাস এর পূর্বে জীবিত ছিলেন। সুনীতিকুমার মনে করেন, এর ভাষা ১৪০০ বা ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দের এ ধারে কিছুতেই হতে পারে না।
প্র : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কত খন্ডে বিভক্ত ? কি কি ?
উ : ১৩ খন্ডে। এগুলো হলো- জন্ম খন্ড, তাম্বুল খন্ড, দান খন্ড, নৌকা খন্ড, ভার খন্ড, ছত্র খন্ড, বৃন্দাবন খন্ড, কালিয়দমন খন্ড, যমুনা খন্ড, হার খন্ড, বাণ খন্ড, বংশী ও বিরহ খন্ড।
প্র : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে কখন সম্পাদনা করেন ?
উ : বসন্তরঞ্জন রায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে এটি সম্পাদনা করেন।
প্র : বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান কবি কারা ?
উ : বিদ্যাপিতি, চন্ডিদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস ।
প্র : বিদ্যাপতির পদ কোন ভাষায় রচিত ?
উ : বিদ্যাপতির পদ ব্রজবুলি ভাষায় রচিত।
প্র : বিদ্যাপতির জীবনকাল কত ?
উ : বিদ্যাপতি ১৩৮০ থেকে ১৪৮০ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
প্র : বৈষ্ণব পদাবলীর বিষয়বস্তু কী ?
উ : রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমলীলা।
প্র :বিদ্যাপতি কোন দেশের কবি ?
উ : বিদ্যাপতি মিথিলার কবি।
প্র : শ্রীচৈতন্যদেব কী কারণে জনপ্রিয় হয়েছেন ?
উ : তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদী কঠোর হিন্দু ধর্মকে উদার করে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। জীবে দয়া, ঈশ্বরকে ভক্তি ও সমাজে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার বাণী তিনি প্রচার করেন।
প্র : বাংলা ভাষায় জীবনী সাহিত্য শুরু হয় কাকে নিয়ে ? ?
উ : শ্রীচৈতন্যের জীবনী লেখার মধ্য দিয়ে জীবনী সাহিত্য শুরু হয়।
প্র : কড়চা কি ?
কড়চা বলতে শ্রীচৈতন্যের জীবনী গ্রন্থকে বোঝানো হয়েছে। যেমন, মুরারি গুপ্তের কড়চা, স্বরূপ দামোদারের কড়চা বা গোবিন্দ দাসের কড়চা। সুকুমার সেনের মতে কড়চা শব্দটি প্রাকৃত শব্দ ‘কটকচ্চ’ এবং সংস্কৃত ‘কৃতকৃত্য’ থেকে এসেছে। ‘কট’ শব্দটি প্রাচীন অনুশাসনে খসড়া লেখা হিসেবে পাওয়া গেছে। সে হিসেবে এর অর্থ হচ্ছে খসড়া রচনা, স্মারক লিপি, সংক্ষিপ্ত বক্তব্য।একে দিনপঞ্জি বা ডায়েরি বা রোজনামচা হিসেবে গ্রহণ করা যায়।
প্র : বৈষ্ণব সাহিত্য কত প্রকার?
উ : তিন প্রকার। যথা : জীবনীকাব্য, বৈষ্ণবশাস্ত্র ও পদাবলী।
প্র : চৈতন্য-ভাগবত কার লেখা ? এটি কি জাতীয় গ্রন্থ ?
উ : বৃন্দাবন দাস চৈতন্য-ভাগবত রচনা করেন। এটি চৈতন্য দেবের জীবনী।
প্র : চৈতন্য-মঙ্গল কার রচনা ?
উ : লোচন দাস চৈতন্য মঙ্গল রচনা করেন।
প্র : চৈতন্য-চরিতামৃত নামক চৈতন্য জীবনী কে রচনা করেন ?
উ : কৃষ্ণদাস কবিরাজ চৈতন্য-চরিতামৃত রচনা করেন।
প্র : শ্রীচৈতন্যের শিষ্য বা গোস্বামী কয় জন এবং তারা কারা ?
উ : শ্রীচৈতন্যের সরাসরি শিষ্য বা ভক্তদের মদ্যে ছয়জনকে ষড়গোস্বামী বলা হয়। এঁরা হলেন, রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামী, রঘুনাথ দাস গোস্বামী, গোপাল ভট্ট গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী ও জীব গোস্বামী।
প্র : জয়ানন্দের চৈতন্যজীবনচরিতের নাম কি ?
উ : চৈতন্যমঙ্গল।
প্র : গেীরাঙ্গবিজয় কাব্যটি কার লেখা ?
উ : এটি র লেখক চূড়ামণি দাসের রচনা।
প্র : ধূয়া বলতে কি বোঝায় ?
উ : একটানা একটি পদ বার বার গেয়ে গান তৈরি হলে তাকে ধূয়া বলে।
প্র : বৈষ্ণব পদাবলীর কি কি পর্যায় রয়েছে ?
উ : এর পর্যায়গুলো হলো : পূর্বরাগ, অভিসার, মিলন, মান-বিরহ. মাথুর, ভাবসম্মিলন, আক্ষেপানুরাগ, নিবেদন প্রার্থনা ইত্যাদি।
প্র : প্রথম বৈষ্ণব পদকর্তা কে ?
উ : জয়দেবকে প্রথম পদকর্তা ভাবা হয়। তিনি বাংলার কবি কিনা তা আজো প্রমাণিত নয়। তবে কাব্য সংস্কৃতে লেখা।


পোস্টটি শেয়ার করুন...

© BengaliGrammar.Com
Maintenance by BengaliGrammar.Com