শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন
প্র : শামসুদ্দনি আবুল কালাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উ : বরিশালের নলছিটি থানার কামদেবপুর গ্রামে; অগস্ট ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে।
প্র : তাঁর প্রকৃত নাম কী?
উ : আবুল কালাম শামসুদ্দনি।
প্র : তিনি কেন নাম পরিবর্তন করেন?
উ : ওই সময় আবুল কালাম শামসুদ্দীন নামে এক রাজনীতিবিদ, সম্পাদক (দৈনিক আজাদের) ও সাহিত্যিক ছিরেন। তাই তিনি ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে নিজের নাম ‘শামসুদ্দীন আবুল কালাম’ বলে পত্র-পত্রিকায় ঘোষনা করেন।
প্র : তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল কী?
উ : চাত্রজীবনে তিনি কলকাতায় রিভলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত থেকে ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতি করেন।
প্র : তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন?
উ : মাহেনও
প্র : তিনি কোন দেশে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন?
উ : ইতালি (রোম শহরে)।
প্র : তাঁর কয়েকটি গল্পগ্রন্থের নাম লেখ।
উ : অনেক দিনের আশা (১৯৫২), ঢেউ (১৯৫৩), পথ জানা নাই (১৯৫৩), দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫), শাহের বানু (১৯৫৭), পুঁই ডালিমের কাব্য (১৯৮৭)।
প্র : তাঁর কয়েকটি উপন্যাসগ্রন্থের নাম লেখ।
উ : আলমগড়ের উপকথা (১৯৫৪), কাশবনের কন্যা (১৯৫৪), সমুদ্র বাসর (১৯৮৬), কাঞ্চনগ্রাম (১৯৯৮)।
প্র : ‘আলমনগরের উপকথা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘আলম নগরের উপকথা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৪ সালে। এখানে সামন্তবাদ ও ধনতন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং উভয়ের দ্বন্দ্বের ফরে গণচেতনার বিকাশ চমৎকারভাবে ভাষারূপ পেয়েছে।
প্র : ‘কাশবনের কন্যা’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘কাশবনের কন্যা’ (১৯৫৪) উপন্যাসে গ্রামকে এমনভাবে তুলে আনা হয়েছে যে, দুঃখ-দারিদ্র্য থাকলেও গ্রামই সুখের স্বর্গ, সমস্ত বিশ্বাসের আধার। উপন্যাসে বরিশাল অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, লোকজীবন, গ্রামীণ দিগন্ত ফটোগ্রাফিকভাবে চিত্রায়িত। সিকদার, হোসেন, জোবেদা, মেহেরজান প্রমুখের মুখের আঞ্চলিক কথা, লোকসঙ্গীত, প্রচলিত লোকবচন ইত্যাদির ব্যবহার উপন্যাসটিকে সুখপাঠ্য ও বিশ্বস্ত করেছে। ‘কাশবনের কন্যা’ গরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, এ উপন্যাসে ঔপন্যাসিক রোম্যান্টিক মনোভঙ্গিতে এমন এক গ্রাম, গ্রামের মানুষ ও পরিবেশ তুলে এনেছেন, যা দুঃখ অতিক্রমকারী, সুখস্বপ্ন আশা সঞ্চারী।
প্র : ‘জায়জঙ্গল’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : সুন্দরবনের জনবিরল বনজঙ্গলঘেরা পরিবেশে ‘জায়গঙ্গল’ (১৯৭৩) উপন্যাস রচিত। সে দিক তেকে এটিকে আঞ্চলিক উপন্যাস বলা চলে। উপন্যাসের একটি চরিত্রও সুন্দরবন অঞ্চলের নয়, উপন্যাসের পটভূমিই কেবল সুন্দরবন। তবে এ অঞ্চরের বর্ণনা দিতে ঔপন্যাসিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যে মানুষগুলোর চিত্র এ উপন্যাসে আছে তারা সেটেলার; জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের চাপে তারা পিতৃ পুরুষের নিবাসভূমি পরিত্যাগ করে সমুদ্রতীরবর্তী শ্বাপদসংকুল সুন্দরবন অঞ্চলে বাস করতে বাধ্য হয়েছে। লাঠিয়াল জয়নাল শেখ এমন একটি চরিত্র যে লাঠিয়ালি পেশায় আস্থা রাখতে না পেরে এ অঞ্চলে এসেছে। তেমনি ফেরারি খুনি, জেলপলাতক আসামী, গোপন বিপ্লবী, পলাতক প্রেমিক-প্রেমিকারা একত্র হয়ে গড়ে তোলে ‘জায়জঙ্গলে’র জগৎ। উল্লেখযোগ্য চরিত্র : জয়নাল শেখ, মিন্নত আলি, যুবতী সাজু, মহাজন জলিল মিয়া। উপন্যাসের ঘটনা উপস্থাপনায় বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণœ হয়েছে। তবে লেখক মৎস্যশিকার, নানা বিশ্বাস-অবিশ্বাস, জাদু-টোনা ইত্যাদির মাধ্যমে আঞ্চলিকতা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন।
প্র : ‘সমুদ্র বাসর’ উপন্যাসের পরিচয় দাও।
উ : বৃহত্তর বরিশার জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী জনজীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘সমুদ্র বাসর’। একে আঞ্চলিক উপন্যাস বলা যায়। কামদেবপুরের জেলে সখানাথ, রতিকান্ত, দেবনাথ, শ্রীহরি সাগর ও নদীর মোহনায় জীবন বাজি রেখে মাছ ধরে। এক দিন তারা সন্ধান পায় নতুন জেগে ওঠা চরের। সখানাথ এ সংবাদ জানায় একটি গোষ্ঠীর দলপতি মুজফফর মিঞাকে। সখানাথ মনে করেছিরেন মুজফফর মিঞা এই সংবাদের বদলে তাকে পুনর্বাসিত করবে। চরের দখল মুজফফর নিলেও সখান কোনো ভাগ্যবদল ঘটে নি। এই অঞ্চলকেন্দ্রিক মানুষের জীবন পরিচর্যা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। মনু মল্লিক ও করিমন এ উপন্যাসের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য চরিত্র। এছাড়া সিকু, ইউসুফ সুজা, জরিনা, মোসলেমা, মতলব সর্দার, গনি মিঞা, সখানাথ, রতিকান্ত, সুজাত আলি, সোনারেবৗ, চান্দু প্রমুখ রয়েছে। উপন্যাসে আঞ্চলিক উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য মতো কতিপয় আচার-বিশ্বাসের উল্লেখ আছে। যেমন : কুমীরব্রত, লাঙ্গবরণের উৎসব ইত্যাদি। উপন্যাসটি ১৯৪৭-’৪৮ খ্রিষ্টাব্দে রচিত। ১৯৮০-’৮১ খ্রিষ্টাব্দে এর অংশবিশেষ পুনর্লিখিত হয় এবং ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার পুথিঘর লিমিটেড থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়।
প্র : শেষজীবনে সাহিত্য ছাড়া আর কোন মাধ্যমে তিনি কাজ করেন?
উ : চলচ্চিত্র।
প্র : সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কোন পুরস্কার লাভ করেন?
উ : বাংলা একাডেমী পুরস্কার।
প্র : তিনি কবে কোথায় মৃতুবরণ করেন?
উ : ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি, ইতালির রোমে। তাঁকে ঢাকায় সমাহিত করা হয়।